শায়খ প্রফেসর মোখতার আহমাদ
ভাবতেই অবাক লাগে, মহাগ্রন্থ আল কুরআন আমাদের রব, সৃষ্টিকর্তা মহান আল্লাহর তা’আলার নিজের কথা, নিজস্ব বানী। তাঁর কাছ থেকে আগত একমাত্র জিনিস যা পনের শত বছর জুড়ে অক্ষত, অবিকৃত আছে। যার একটি বিন্দু, নোকতা আজ পর্যন্ত পরিবর্তিত হয়নি। মুসলমানদের এজন্যে খুবই কৃতজ্ঞ হওয়া উচিত এটা ভেবে যে, মহাকাশ থেকে পাঠানো সম্পূর্ণ ফ্রেশ একটি জিনিস কেবল তাদের কাছেই আছে। তিনি নিজেই বলেছেন, এটিকে তিনিই সংরক্ষণ করবেন, এর মধ্যে কোনো বিকৃতি বা পরিবর্তন আসতে পারবেনা। সমগ্র মানব ও জিনজাতি একত্রিত হলেও এর একটি সূরা বা আয়তের মত কিছু কেউ বানাতে পারবে না। এটি ভাবলে কুরআন পড়া শুরু করার আগেই আপনার চোখ দিয়ে অশ্রু গড়িয়ে পড়বে। আবু হুরাইরা (রা) কখনো কখনো কুরআন পড়ার পূর্বে অজ্ঞান হয়ে যেতেন এবং বলতে থাকতেন, “হাজা কিতাবু রাব্বি” এটি আমার প্রভুর কিতাব!!
কিন্তু এই মহাগ্রন্থকে নিয়ে আমরা মাঝে মাঝেই কিছু অযাচিত অবস্থার মুখোমুখি হই। তারমধ্যে একটি হলো, আগুনে কুরআন পোড়ে না। কুরআন আগুনে পোড়ে না, কারন কুরআনের উপর চামড়া বা মোটা লেদার জাতীয় হার্ড পেপার থাকে এবং কাগজের ভাজের ভিতরে অক্সিজেন পৌঁছাতে পারে না, এজন্য কোথাও কোথাও আমরা দেখতে পাই সব পুড়ে ছাই হয়ে গেলেও কুরআন অক্ষত অবস্থায় থাকে। এটা কোনো অলৌকিকতা নয়। এটা সকল ধরণের বইয়ের বেলায়ও হতে পারে। যারা এসব নিয়ে প্রচুর পরিমানে উচ্ছাস দেখাচ্ছেন, কুরআনকে সত্যগ্রন্থ প্রমাণ করার জন্য এমন সাধারণ একটা বিষয়কে হাইলাইট করতে চান, আপনাদের লজ্জা থাকা উচিৎ এসব সস্তা আবেগ দেখাতে।
কুরআন সত্য গ্রন্থ এটা প্রমান করার জন্য এতো সস্তা আবেগ দেখান ঠিক নয়? কুরআনের মিরাকল প্রমান করার জন্য হাজার হাজার মোজেজা রয়েছে, সেগুলার ধারে কাছেও আমাদের দেখা যায় না ৷ শায়খ ড. আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর রাহিঃ ঠিকই বলেছেন, এ দেশের মানুষের ধর্মীয় আবেগ বেশি, কিন্তু ধর্মীয় জ্ঞান কম৷ বঙ্গবাজারসহ বিভিন্ন যায়গায় আমরা এমনটি দেখতে পাই যে সেখানে হয়তো অক্ষত অবস্থায় অথবা কিছু অংশ পোড়া কুরআন পাওয়া যায়, আবার অন্যান্য ধর্মগ্রন্থও পাওয়া যায়, মোটা ডায়রিও পাওয়া যায়। অন্য কোনো ধর্মের লোকেরা এসব নিয়ে উচ্ছ্বসিত না হলেও বাংগালী মুসলমানরা বরাবরই এসব নিয়ে এতো পরিমাণ উচ্ছ্বসিত হয় যে নাস্তিক, ইসলাম বিদ্বেষী ও অমুসলিমদের কাছে এসব হাসির পাত্র হয়ে দাঁড়ায়। ‘আগুনে প্রিন্টেড কুরআন পোড়া যায় না’, এই যুক্তি দিয়ে কুরআনের সত্যতা প্রমাণ করতে চাইলে অন্যেরাও তাদের ধর্মগ্রন্থের ব্যাপারে একই দাবী করবে, তখন বিষয়টা কি দাঁড়াবে, ভেবে দেখেছেন?
দেখলেন তো, এখন ঠিকই প্রমান হলো বঙ্গবাজারে যেটিকে কুরআন বলে দাবী করা হয়েছিল সেটি মুলত কুরআন ছিল না, এটি ছিল একটি হাদিসের কিতাব।
কুরআন আগুনে পোড়ে না, একথা কে বললো? বরং কুরআনের মুসহাফ পুরোনো হয়ে গেলে বা নষ্ট হয়ে গেলে সেটিকে আগুনে পুড়িয়ে ছাইগুলো মাটিতে পুঁতে ফেলা সুন্নাহসম্মত পদ্ধতি। এমনটি করেছেন সাহাবায়ে কেরাম রা., কুরআনের সংকলক হযরত উসমান (রাঃ)-ও এমনটিই করেছেন।
এছাড়াও আমরা দেখতে পাই কাফের, মুশরিক, মুরতাদ বা ইসলাম বিদ্বেষীরা বিভিন্ন জায়গায় কুরআন পুড়িয়েছে এবং আমরাও সেগুলোর প্রতিবাদ করেছি। সুতরাং এসব নিয়ে যারা আবেগ ছড়াচ্ছেন তারা প্লিজ থামুন, ইসলামকে, মুসলিমদের আর নিচে নামাবেন না৷
কুরআনকে মহান আল্লাহ সংরক্ষণ করছেন কোটি কোটি আলেম ও হাফেজে কুরআনদের হৃদয়ে সংরক্ষিত করার মাধ্যমে, লাওহে মাহফুজে সংরক্ষিত রাখার মাধ্যমে। ফলে পৃথিবীর সকল কুরআনের মুসহাফ পুড়ে গেলেও আবার নতুন করে বিন্দুমাত্র পরিবর্তন ছাড়া মহাগ্রন্থ আল কুরআনকে পুনরুদ্ধার করা সম্ভব। এটিই কুরআনের মুজিযা।
লেখক : চেয়ারম্যান, তারবিয়াহ এডুকেশন নেটওয়ার্ক
আমরা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।